ভোটে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ ও ড্রোন নিষিদ্ধের ভাবনা ইসির

3 hours ago 5

এবার ভোটে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ ও ড্রোনের মতো আধুনিক প্রযুক্তি হলেও বেশ কিছু অসুবিধা থাকায় এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সভায় তুলে ধরে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৈঠক শুরু হয়। দুপুর পর্যন্ত চলা বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন ইসির কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। সভায় এক গুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।

রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন হবে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে
নির্বাচন কমিশন সভায় জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত, ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নিমিত্ত প্রতিষ্ঠান বাছাইসহ কিছু প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলমান। এছাড়া নির্বাচনের সময়সূচি/তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ আরও কিছু বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন।

সভায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের বিষয়গুলো কার্যপত্রে তুলে ধরা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মূলত তিনটি পর্যায়ে কাজ করে থাকে।

তফসিল ঘোষণার আগে, ভোটের সময় ও ভোটের পরে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা কাঠামোর বিষয়ে বলা হয়েছে,

১. তফসিল ঘোষণার পূর্বে আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসী এবং নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।

২. তফসিল ঘোষণা হতে নির্বাচন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শান্তিপূর্ণ রাখা। সব প্রার্থী যাতে বিধিসম্মতভাবে নির্বাচনি কার্যক্রম ও প্রচার প্রচারণা চালাতে পারে এবং ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া।

৩. নির্বাচনি এলাকায় সন্দেহভাজন/বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

jagonews24

এছাড়াও নির্বাচনি এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আমর্ড পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার ও কোস্টগার্ড নিয়োজিত থাকে। এছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতাসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকে।

৪. নির্বাচন পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম: নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণত নির্বাচনের পরবর্তী দিন থেকে ৪৮ ঘণ্টা বা ২ দিন স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকে। এ সংক্রান্ত কাজে আইনগত নির্দেশনা প্রদানের জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্ট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটি ভোটের পরবর্তী ২ (দুই) দিন পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ পরিচালনা করেন।

কখন কীভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে

এবার আইন শৃঙ্খলা সভায় অন্তত ১৩টি বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তাব রেখেছে ইসি সচিবালয়।

১. ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচনি এলাকা তথা সমগ্র দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন: এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হতে ভোটগ্রহণের পর পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় প্রচলিত আইন, নির্বাচনি বিধি-বিধান ও পদ্ধতিগতভাবে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্ব হতে নির্বাচনের কয়েকদিন পর পর্যন্ত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও ভোটকেন্দ্রের বাইরে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে নির্দেশনা জারির মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ লক্ষ্যে নির্ধারিত দিনের জন্য বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন ও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোটগ্রহণের কয়েক দিন পর পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকা তথা সমগ্র দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।

২. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এ লক্ষ্যে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে একটি ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে ইসি।

তাছাড়া নির্বাচনি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে পল্লী এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গ্রাম পুলিশ/চৌকিদার/দফাদার নিয়োগের পাশাপাশি এ ধরণের কাজে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন হবে। তাই আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় গোয়ন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে এবং স্থানীয় সরকারের আওতাধীন ইউপি সচিব/গ্রাম পুলিশদের এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পূর্বশর্ত।

এমওএস/এসএনআর/জিকেএস

Read Entire Article