মুক্তিপণ দিয়েও বাবা-মা পেলেন ছেলের ‘মরদেহ’

2 hours ago 3

স্কুলছাত্র অনয় চন্দ্র মোদক (১৩) নিখোঁজ হয় গত ১৪ জানুয়ারি। পরে অজ্ঞাতপরিচয় নম্বর থেকে বাবা-মাকে ফোন দিয়ে জানানো হয় তাদের ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে ছেলেকে ফেরত দেওয়া হবে। তাদের কথামতো প্রথমে ২০ হাজার এবং দ্বিতীয়বারে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয় অপহরণকারীদের। মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার পরও ‘জীবিত নয়, ছেলের মরদেহ’ পেলেন তারা।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর আড়িয়াল খাঁ নদীতে ভেসে ওঠে ‘অনয়ের মরদেহ’। 

অনয় নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বেলাব মাটিয়াল পাড়া গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোদকের ছেলে। সে বেলাব পাইলট সরকারি মর্ডান উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। 

এদিকে, আড়িয়াল খাঁ নদে ভাসমান মরদেহটি নিখোঁজ স্কুলছাত্র অনয়ের বলে তার পরিবার দাবি করলেও পুলিশ বলছে, মরদেহটি কার সেটির ডিএনএ পরীক্ষার করার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে। কারণ মরদেহ ফুলে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চেনা যাচ্ছে না।

পুলিশ ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অনয় চন্দ্র মোদক শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য বাড়ি থেকে বেলাব বাজারে যায়; কিন্তু তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধান না পেয়ে ওইদিন রাতেই বেলাব থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। জিডিটি ১৬ জানুয়ারি মামলায় রূপান্তরিত হয়। 

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিখোঁজ নিয়ে লেখালেখি করার পর অজ্ঞাতপরিচয় নম্বর থেকে অনয়ের পরিবারের কাছে একটি ফোন আসে। ওই প্রান্ত থেকে ফোনে মুক্তিপণ বাবদ ১ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তাদের দাবি অনুযায়ী বিকাশের মাধ্যমে দুই কিস্তিতে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। 

এরই মধ্যে ওই মোবাইল নম্বরটি ট্র্যাকিং করে বেলাব থানা পুলিশ। সেখানে তাদের অবস্থান দেখায় ভোলা। এরপর বেলাব থানা পুলিশের একটি দল অনয়কে উদ্ধারের জন্য ভোলায় যায়। 

এরই মধ্যে রোববার বিকেলে গ্রামের পাশে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের দীঘলদিকান্দি এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদে একটি ভাসমান মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরিবারের দাবি, নদে ভেসে ওঠা মরদেহ নিখোঁজ অনয়ের। তারা এটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে, জড়িতদের শনাক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।

নিখোঁজ অনয়ের চাচাতো ভাই পলাশ মোদক বলেন, ‘অনয় নিখোঁজ হওয়ার পরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তার খোঁজ না পেয়ে থানায় জিডি করি। নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করলে একটি অজ্ঞাতপরিচয় নম্বর থেকে আমাদের ফোন করে জানানো হয় তারা অনয়কে অপহরণ করেছে। তাদের কথামতো অনয়কে জীবিত পাওয়ার আশায় কয়েক দফায় বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকাও দিয়েছি; কিন্তু অনয়কে জীবিত পাইনি, পেয়েছি মৃত অবস্থায়। তারা অনয়কে হত্যা করেছে।’

মরদেহ ভেসে আসার পর পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, ডিবির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

বেলাব থানার ওসি মীর মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, নদীতে ভাসমান মরদেহের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। নিখোঁজের স্বজন ধারণা করছেন, এটি অনয়ের মরদেহ। সুরতহাল ও ডিএনএ পরীক্ষা শেষে জানা যাবে এটি তার মরদেহ কি না।

Read Entire Article