আজকাল মানুষের ব্যস্ত জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর খাবার, অতিরিক্ত তেল-মশলা, এবং পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব বিভিন্ন হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
তবে সঠিক খাবারের মাধ্যমে এই বিপদ থেকে নিজেকে অনেকটাই রক্ষা করতে পারবেন। স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন ও নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে হৃদরোগগুলোর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তাই আসুন জেনে নিই এমন ৭টি খাবারের কথা, যা নিয়মিত খেলে আপনার হৃদযন্ত্রটি থাকবে সুস্থ ও শক্তিশালী।
১. চর্বিযুক্ত মাছ
স্যালমন, ম্যাকারেল, সারডিন এবং টুনা মাছের মতো স্বাস্থ্যকর তেলযুক্ত সামুদ্রিক মাছ হার্টের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এগুলোতে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা রক্তনালীর প্রদাহ কমায়, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়।
এছাড়াও, নিয়মিত মাছের তেল খেলে হৃদপিণ্ডের সংকোচন শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রক্তনালীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সপ্তাহে অন্তত দুইবার তেলযুক্ত মাছ খাওয়া হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। যারা মাছ কম খান, তাদের জন্য আখরোট বা চিয়া সীডও ওমেগা-৩-এর ভালো উৎস। তবে সামুদ্রিক মাছ আমাদের দেশে সব এলাকায় পাওয়া যায় না, তাই এর পরিবর্তে সহজপ্রাপ্য অন্য তেলযুক্ত দেশি মাছও খেতে পারেন।
২. টাটকা শাকসবজি
আমাদের দেশে প্রচুর সবুজ শাকসবজি পাওয়া যায়। এগুলোতে থাকে ভিটামিন, খনিজ এবং নাইট্রেট। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন অন্তত এক বাটি শাক খাওয়া হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য অপরিহার্য। শাকসবজি কাঁচা বা হালকা ভাপে রান্না করে খেলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
৩. চিয়া সিড
চিয়া সিডে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। নিয়মিত চিয়া সিড খেলে রক্তচাপ হ্রাস পায়, খারাপ কোলেস্টেরল কমে এবং রক্ত চলাচল উন্নত হয়। এটি দুধ, দই, স্মুদি ও সালাদে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
৪. আখরোট
আখরোটে থাকে উদ্ভিদভিত্তিক ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, কপার এবং ম্যানগানিজ। প্রতিদিন কয়েকটি আখরোট খেলে খারাপ কোলেস্টেরল কমে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। এটি রক্তনালীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে, হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৫. জলপাই তেল বা অলিভ ওয়েল
মেডিটেরিয়ান ডায়েটের অন্যতম উপাদান হলো জলপাই তেল। এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সালাদ বা রান্নায় জলপাই তেল ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। তবে, এর ক্যালোরি বেশি হওয়ায় পরিমাণ সীমিত রাখা উচিত।
৬. ডার্ক চকলেট
শতকরা ৭০ ভাগ বা তার বেশি কোকো সমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট হৃদয়ের জন্য উপকারী। এতে থাকা ফ্ল্যাভনয়েড রক্তপ্রবাহ উন্নত করে, রক্তচাপ কমায় এবং রক্তনালীর নমনীয়তা বাড়ায়। তবে চিনি ছাড়া ডার্ক চকলেট বেছে নিতে হবে। দিনে মাত্র কয়েক টুকরো ডার্ক চকলেট খাওয়াই যথেষ্ট।
৭. টমেটো
টমেটোতে রয়েছে লাইকোপিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তনালীর ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, লাইকোপিনের মাত্রা কম থাকলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই তাজা টমেটো খাওয়া বা সালাদ, স্যুপে টমেটো ব্যবহার করা হার্টের জন্য খুব ভালো।
এই ৭টি খাবারকে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আমরা সহজেই হৃদয়কে সুস্থ রাখতে পারি। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের সঙ্গে এই খাবারগুলো হৃদয়কে শক্তিশালী করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। সুস্থ হৃদয় মানে সুস্থ জীবন। তাই আজ থেকেই এই খাবারগুলোকে নিজের ডায়েটে স্থান দিন, আর হৃদয়কে দিন দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা।
তথ্যসূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
মামুনূর রহমান হৃদয়/এএমপি/জেআইএম