রামন বিমানবন্দরে হামলার পর ইসরায়েলে অজানা আশঙ্কা কেন?

7 hours ago 4
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় রামন বিমানবন্দর (ইলাত-রামন বিমানবন্দর) একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র। লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর ইলাতের কাছে অবস্থিত বিমানবন্দরটিতে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ইয়েমেনভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীরা ড্রোন হামলা চালায়। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদ হিসেবে এ হামলার দাবি করা হচ্ছে। ইয়েমেনে সাম্প্রতিক ইসরায়েল-মার্কিন সফল অভিযানের পর হুতিদের কার্যক্রমে ভাটার আশা করা হচ্ছিল, কিন্তু ঘটনাটির পর ইসরায়েলে নতুন করে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই হামলা হুতিদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের অংশ। তারা প্রায় মিসাইল এবং ড্রোন ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চেষ্টা করে। যদি বিমানবন্দরটিতে একটি ড্রোন আঘাত করে, তবুও সামগ্রিকভাবে হামলাটি ব্যর্থ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এর প্রভাব সীমিত এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিকাংশ অংশে কার্যকর ছিল। কিন্তু ওই একটি ড্রোনের আঘাতই ইসরায়েলকে ভাবাচ্ছে। কারণ, প্রযুক্তির আধুনিকায়ন ঘটলেও কর্মীদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপরদিকে হুতিদের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল-রাহাওয়ির নিহতের পরও তারা যে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়নি তা প্রতীয়মান হচ্ছে।  ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, হুতিরা ইয়েমেন থেকে একাধিক ড্রোন নিক্ষেপ করে, যার মধ্যে একটি রামন বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনালে আঘাত করে। এই ঘটনায় কাঁচের জানালা ভেঙে পড়ে এবং অন্য কারণে দুজন ব্যক্তি হালকাভাবে আহত হন। বিমানবন্দরটি অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফ্লাইট বিলম্বিত হয় এবং আকাশপথে সতর্কতা জারি করা হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, রাডারে ড্রোনটি সনাক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বরত সেনার ভুলের কারণে এটিকে হুমকি হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়নি। ফলে সাইরেন বাজানো হয়নি এবং এটি প্রতিহত করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। এর আগে একই দিনে তিনটি অন্যান্য ড্রোন মিশর সীমান্তে প্রতিহত করা হয়। হুতিরা এই হামলাকে "সফল" বলে দাবি করেছে এবং আরও আক্রমণের হুমকি দিয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি বিরল ব্যর্থতা ছিল। এমনটি যুদ্ধের শুরু থেকে হুতিদের ১৫০টিরও বেশি ড্রোন হামলার মধ্যে মাত্র ২% ক্ষেত্রে ঘটেছে। দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেমন আয়রন ডোম এবং অন্যান্য রাডার-ভিত্তিক সিস্টেম অধিকাংশ ড্রোন প্রতিহত করতে সক্ষম ছিল। একই সময় তিনটি ড্রোন মিশর সীমান্তে ধ্বংস করা হয়, যা দেখায় যে হুথিদের বহু-ড্রোন কৌশল সত্ত্বেও প্রধান আঘাত এড়ানো গেছে। এই ব্যবস্থাগুলোর সাফল্যের কারণে হামলার সামগ্রিক প্রভাব কমে যায় এবং বিমানবন্দরের কার্যক্রম দ্রুত পুনরায় শুরু হয়। যদিও ড্রোনটি টার্মিনালে আঘাত করে, ক্ষতির পরিমাণ ছিল নগণ্য—শুধু জানালা ভাঙা এবং হালকা আঘাত। কোনো মারাত্মক ক্ষয় বা জীবনহানি ঘটেনি। হুতিদের ড্রোনগুলো ছিল সাধারণ ধরনের। উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গুরুতর ক্ষতি করার ক্ষমতা সেসব রাখে না। এ ছাড়া হামলাটি গাজায় ইসরায়েলি অভিযানকে থামানোর লক্ষ্যে করা হলেও তা কোনো নতুন কৌশলগত পরিবর্তন আনেনি। ইসরায়েলি তরফে যে ভুল ঘটেছে (ড্রোনকে হুমকি না মনে করা), তা একক ঘটনা ছিল এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়। আইডিএফ-এর তদন্তে বলা হয়েছে, পূর্বের ঘটনার মতো এ থেকে শিক্ষা নেওয়া হচ্ছে। হুতিদের ড্রোনের পরিসর এবং নির্ভুলতা সীমিত। দীর্ঘ সীমান্ত দূরত্বের কারণে কম কার্যকর হয়। এছাড়া, হুতিদের হামলাগুলো প্রায়শই প্রচারমূলক। বাস্তব ক্ষতির চেয়ে মনোবৈজ্ঞানিক প্রভাব তৈরি করার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটাও সীমিত ছিল। হামলাটি ইসরায়েলের গাজা অভিযানের মধ্যে ঘটেছে। কিন্তু ইসরায়েলের দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং মার্কিন-ইসরায়েলি সহযোগিতা হামলার প্রসার রোধ করে। রামন বিমানবন্দরে হামলা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি ফাঁক তৈরি করলেও সামগ্রিকভাবে তা ব্যর্থ হয়েছে। এটি হুতিদের কৌশলগত দুর্বলতা এবং ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষার শক্তি প্রকাশ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসরায়েলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হলেও নাগরিকরা এখন স্বস্তিতে নেই। কারণ, এখনও শত্রুরা ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম। আর এতে প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকছে।  তবে আইডিএফের ভাষ্য হলো, ভবিষ্যতে এমন হামলা রোধে ইসরায়েল মানুষীয় ত্রুটি কমানোর উপর জোর দেবে। সফলতার জন্য হুতিদের আরও উন্নত অস্ত্রের প্রয়োজন হবে। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বাড়িয়েছে, কিন্তু বড় ধরনের পরিবর্তন আনেনি।
Read Entire Article