সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর অলেপ্পোর বেশিরভাগ এলাকা দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। তাদের হামলার কাছে পিছু হটেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে এবার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে মিত্র দেশ রাশিয়া। ফলে পিছু হটতে শুরু করেছে বিদ্রোহীরা।
সোমবার (০২ ডিসেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারবিরোধী যোদ্ধাদের অগ্রযাত্রাকে থামাকে রাশিয়া যৌথ হামলা চালিয়েছে। সিরিয়ার শহর ইদলিব ও আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের অবস্থানকে নিশানা করে এ হামলা চালানো হয়েছে। সোমবার এ হামলার পর বিদ্রোহীরা কিছুটা পিছু হটতে শুরু করেছে। এর আগে কয়েকদিনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে বিদ্রোহীরা।
সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) ও তার মিত্ররা গত কয়েকদিনে নাটকীয়ভাবে অগ্রসর হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় এ গতি কিছুটা শিথিল হয়েছে।
আলজাজিরার সাংবাদিক সিনেম কোসেগলু বলেন, সিরিয়ার বিরোধীদের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। তবে এটি আগের মতো গতিশীল নয়। গত দুদিনের মধ্যে সংকট নিয়ে আলোচনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বেড়ে যাওয়ায় গতি কমেছে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা এখনও আলেপ্পোর দক্ষিণে হামার উপকণ্ঠে অবস্থান করছে। তারা তেল রিফাত শহরের বেশিরভাগ দখল করেছে। এলাকাটিকে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) কুর্দিদের নিরাপদে সরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি মানবিক করিডোর আহ্বান করছে।
এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার আলেপ্পো শহর দখল করে নিয়েছে হায়াত তাহরির আল-শাম নামে বিদ্রোহী গ্রুপ। এরপর ওই বিদ্রোহীরা শহরে থাকা সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের রাজপ্রাসাদে রোববার ঢুকে পড়ে।
রাজপ্রাসাদ ছাড়াও নিকটবর্তী আলেপ্পো সামরিক একাডেমিরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এ সময় বিদ্রোহীরা রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও নিজেদের কবজায় নেওয়ার দাবি করে।
সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট বলছে, প্রায় পুরো আলেপ্পোই এখন বিদ্রোহীদের দখলে। তবে শহরের উত্তরে কিছু কুর্দিশ এলাকা এখনও সরকারপন্থি বাহিনীর হাতে আছে।
দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে কাবু সিরিয়ায় ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের সহায়তায় নিজের অবস্থান সুসংহত করেছিলেন বাশার আসাদ। তবে তখনও আলেপ্পো আসাদ সরকারের হাতছাড়া হয়নি। বরং যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের নিয়ন্ত্রণ হারাল আসাদের বাহিনী।
ইরানের কাছে সিরিয়ার কৌশলগত গুরুত্ব অনেক। আর তাই বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তা এগিয়ে আসার কথা জানিয়েছে তেহরান। এমনকি রোববার সিরিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। তবে দেশত্যাগের আগে তিনি বলেন, সিরিয়ার সরকার আবারও বিজয়ী হবে।
২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে শুরুতে কোণঠাসা ছিলেন বাশার আল-আসাদ। তবে রাশিয়া ও ইরানের জোরালো সমর্থনে নিজের পায়ের নিচে মাটি শক্ত করেন তিনি। যদিও সিরিয়ার পুরো নিয়ন্ত্রণ তার হাতে নেই। দেশটির ৭০ শতাংশ বাশার আল-আসাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপ।