রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার অপরাধে পুলিশসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

2 weeks ago 9

বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার অভিযোগে করা মামলায় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (২০ আগস্ট) কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে সহকারী পরিচালক তুষার আহমেদ এ অভিযোগপত্র জমা দেন।

দুদক সূত্র জানায়, ইয়াছমিন আক্তার নামে রোহিঙ্গা এক নারীকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাইয়ে দিতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ সাতজনকে আসামি করে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে বুধবার মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় দুদক।

আসামিরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেল, কক্সবাজার পৌরসভার নতুন বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন বাদশা, কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) এএসআই সাজেদুর রহমান ও সাবেক পরিদর্শক প্রভাষ চন্দ্র ধর।

অভিযোগপত্রে সাত আসামির মধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সাবেক পরিদর্শক প্রভাষ চন্দ্র ধর ও কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেলকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কর্মরত) তুষার আহমেদ বলেন, মামলাটি দীর্ঘ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মামলায় থাকা দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদকের জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে, কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরিচয়ে ২০১৭ সালের ৭ জুন কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন ইয়াছমিন আক্তার নামে এক নারী। বাবা হিসেবে মৃত মোহাম্মদ হোসেন ও মা নুর নাহার বেগম পরিচয় দেন তিনি। সঙ্গে জমা দেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বাক্ষরিত জাতীয় পরিচয়পত্র ও নাগরিকত্বের প্রত্যয়ন। পাশাপাশি ইয়াছমিন আক্তারের নামে ইস্যুকৃত জন্ম সনদ, জাতীয়তাসনদ, প্রত্যয়ন পত্রের ফটোকপি সত্যায়িত করেছেন কক্সবাজার পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম। অথচ ইয়াছমিন আক্তার নামের যে নারীকে বাংলাদেশি বলে এসব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে তিনি মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা। তার প্রকৃত নাম নুরুন্নাহার বেগম। তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। তার বাড়ি ছিল মিয়ানমারের রাখাইন এলাকার মংডুতে।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের পরিচিত বলে ইয়াছমিন আক্তারের জন্ম সনদ, জাতীয় সনদ ও প্রত্যয়ন পত্রের ফটোকপি সত্যায়িত করেন। কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বাদশা নামের এক ব্যক্তি এ রোহিঙ্গা নারীকে নিজের বোন পরিচয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তা সনদ নিয়েছেন।

কক্সবাজার আদালতে কর্মরত দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম বলেন, অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। ধার্য তারিখে কগনিজেন্স শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। পর্যালোচনার পর আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন।

অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার পৌরসভার কয়েক জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশ যাবার সুযোগ করে দিচ্ছেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের দিচ্ছেন ভুয়া নাম-ঠিকানার জন্ম-নিবন্ধনও। এসব সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ, আইনজীবীসহ অনেকে। আর এসব কাগজ দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাগিয়ে অনায়াসে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপে চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। ফলে পাসপোর্ট অনুসারে তাদের কারণে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি।

দুদকের দেওয়া তথ্যমতে, রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় ২০২১ সালের ২৫ মার্চ চট্টগ্রামের দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ১১টি মামলা হয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা বাদী হয়ে করা এসব মামলায় কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক সাত কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের দুই চেয়ারম্যান, ডিএসবির তিন পরিদর্শক, দুই সহকারী উপ-পরিদর্শক, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা সদস্যকে আসামি করা হয়।

সায়ীদ আলমগীর/আরএইচ/জিকেএস

Read Entire Article