শরীয়তপুরে ভাষাসৈনিকের জায়গা দখলের অভিযোগ

2 weeks ago 14

শরীয়তপুরে ভাষাসৈনিক নারায়ণ চন্দ্র দের জায়গা দখলে নিয়ে রাতের আঁধারে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এসময় দখলকারীরা একটি সমাধি ভেঙে তার ওপর দিয়েই ইট গেঁথে রাস্তাটি তৈরি করেন।

গত ৩০ নভেম্বর ভোরের দিকে শরীয়তপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাসার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বরে ৯৫ বছর বয়সে মারা যান ভাষাসৈনিক নারায়ণ চন্দ্র দে। তার বসতবাড়িতে ৮৭ শতাংশ জায়গা রয়েছে। বর্তমানে এটি তার পরিবারের দখলে আছে। নারায়ণ চন্দ্রের বাড়ির পাশেই বসবাস করেন শামসুল হক মল্লিকসহ বেশ কয়েকজন। প্রতিবেশীদের চলাচলের জন্য রাস্তা না থাকলেও তাদের কথা চিন্তা করে কয়েক বছর আগে সাড়ে ৩ ফুট জায়গা ছেড়ে দেয় নারায়ণ চন্দ্রের পরিবার। তবে সম্প্রতি শামসুল হক মল্লিকের ছেলে এমদাদুল হক রব্বানী রাস্তাটি আরও প্রশস্ত করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন।

৩০ নভেম্বর ভোরের দিকে তার লোকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পূর্বের সীমানা ভেঙে রাস্তাটি প্রশস্ত করে নতুন করে বাঁশ দিয়ে সীমানা বেড়া দেন এবং ইট ফেলে দখলে নেন। এসময় তাদের বাধা দিতে গেলে নারায়ণ চন্দ্রের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে মারধর ও নারীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানালে তারা এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

শরীয়তপুরে ভাষাসৈনিকের জায়গা দখলের অভিযোগ

নারায়ণ চন্দ্র দের ছেলে অশোক দে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলে ২০১৬ সালে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত ৩ মাস বয়সে মারা যায়। পরে ওকে আমাদের জায়গায় সমাধিস্থ করি। কিন্তু এমদাদুল হক রব্বানীর লোকজন আমার ছেলের সমাধির ওপর দিয়েই জোর করে জায়গাটি দখলে নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছে। বাবা হিসেবে আমার হৃদয়ে আজ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমি দোষীদের বিচার চাই।’

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাট্যনির্দেশক ও নারায়ণ চন্দ্র দের মেয়ে সুজাতা রানী দে বলেন, ‘আমার বাবা নারায়ণ চন্দ্র দে ভাষা আন্দোলন করেছেন। কিন্তু আজ আমাদের জায়গায় দখল হয়ে যাচ্ছে। আমার ভাইয়ের ছেলের সমাধির ওপর রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবেশী এমদাদুল হক রব্বানীর নির্দেশে কয়েকজন স্থানীয় মিলে বাঁশের বেড়া ও রাস্তায় ইট ফেলে রাস্তা বানানোর মধ্য দিয়ে আমাদের জায়গা দখলের চেষ্টা করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৌরসভার নিয়ম হচ্ছে যে কোনো রাস্তা নির্মাণের সময় রাস্তার দুই পাশের দুই মালিক সমানভাবে রাস্তার জন্য জায়গা দেবেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে সাবেক পৌরমেয়রের অনুরোধে আমরা পূর্বে অর্ধ শতাংশ জায়গা দিয়েছি। মানুষের চলাচলে কষ্ট হবে দেখে আমরা দেওয়াল পর্যন্ত দেইনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমরা ভুল করেছি। অন্যপাশ থেকে জায়গা না নিয়ে আমরা হিন্দু শুধু এই কারণে এখন তারা পুনরায় আমাদের কাছ থেকে জোর করে রাস্তার জন্য আরও জায়গা নিতে চাচ্ছেন। এটা পুরোটাই অমানবিক। আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি।’

শরীয়তপুরে ভাষাসৈনিকের জায়গা দখলের অভিযোগ

নারায়ণ চন্দ্রের দের ছোট মেয়ে চন্দনা দে অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি জায়গা না থাকায় স্থানীয়দের কথা চিন্তা করে অন্তত সাড়ে ৩ ফুট জায়গা আমরা ছেড়ে দিয়েছি। তবে অন্য পাশের প্রতিবেশী সেটি ছাড়েনি। অথচ পৌরসভার অনুমতি না নিয়েই সুজন পাহাড়, মনির প্যাদাসহ অন্তত দেড়শ লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বেড়া ভেঙে আমার ভাইয়ের ছেলের সমাধির ওপর দিয়ে নতুন করে রাস্তা বানিয়েছে। আমরা বাধা দিতে গেলে মারধর করে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শংকর প্রসাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতার দেশ। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শামসুল হক মল্লিকের ছেলে অভিযুক্ত এমদাদুল হক মল্লিক বলেন, ‘আমার নামে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। নারায়ণ চন্দ্র দের জায়গায় কারা বাঁশের বেড়া দিয়েছে বা রাস্তা নির্মাণ করেছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি ব্যাংকের মানুষ ঢাকায় থাকি। বছরে দু-একবার বাড়িতে যাওয়া হয়।’

জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিধান মজুমদার অনি/এসআর/এমএস

Read Entire Article