নরসিংদীতে আখ চাষ খুব কম হয়। তবে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা মহসিন। নরসিংদীর শিবপুরে মাত্র একটি চারা দিয়ে শুরু করে আখ চাষ বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তিনি। এতে কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় কৃষকেরা আখ চাষে ঝুঁকছেন। উঁচু জমি ও বেলে-দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকেরা বলছেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি বেশি দাম পাওয়ায় খুশি তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি খরা মৌসুমে নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় ১৮২ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের মুনশেফের চর এলাকার আখ চাষি মহসিন ২ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন। গত বছর ২ বিঘা জমিতে ১ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ৩ লাখ টাকার আখ বিক্রি করেন। চলতি বছরও তার আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবারও ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি। তার ক্ষেতে বিভিন্ন জাতের আখ আছে। বর্তমানে বাজারগুলোতে প্রতি পিস আখ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা দরে।
একই উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের সৈয়দনগর দড়িপাড়া গ্রামের তরুণ মারুফ হাসান মুরাদ। ৩ বছর আগে শখের বশে বাড়ির আঙিনায় ফিলিপাইনের কালো জাতের একটি আখের চারা রোপণ করেন। আখটি খেতে বেশ সুমিষ্ট, নরম এবং রসালো হওয়ায় আকৃষ্ট হয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পরিকল্পনা করেন। এরপর শুরু হয় চারা তৈরির কাজ। প্রথমে বাড়ির আঙিনায়, পরে জমিতে রোপণ করে চারা তৈরি করতে থাকেন। দীর্ঘ ৩ বছরের মধ্যে তিনি সফল আখ চাষি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হন। বর্তমানে তিনি নরসিংদী এবং পার্শ্ববর্তী জেলার কৃষকদের নতুন প্রজাতির আখের চারা ও চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন।
স্থানীয় পাইকারি আখ বিক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, ‘এ জাতের আখ সাইজে মোটা, লম্বা ও রসালো হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা আছে। প্রতি পিস আখ পাইকারি ৬০ টাকা দরে কিনে একশ থেকে দেড়শ টাকা বিক্রি করি। এতে বেশ লাভবান হয়েছি।’
স্থানীয়রা জানান, মারুফ ফিলিপাইনের কালো আখ চাষ করে এলাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার ক্ষেতের আখ দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসে। আখ ও আখের চারা বিক্রি করে তিনি বর্তমানে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এ জাতের আখ চাষ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিলে দেশের সব কৃষক উপকৃত হবেন। পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে নরসিংদীতে ১৮২ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হচ্ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই চিবিয়ে খাওয়ার আখ।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর নরসিংদীতে ফিলিপাইনের কালো রঙের নতুন জাতের আখ চাষ হয়েছে, যা খেতে বেশ সুমিষ্ট ও নরম। এ আখে তেমন রোগবালাই না থাকায় বেশ লাভজনক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নরসিংদী কৃষি ও কৃষকদের যে কোনো প্রয়োজনে সব সময় পাশে থেকে বীজ, কীটনাশক ও সার দেওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে পরামর্শ দিয়ে থাকে।’
সঞ্জিত সাহা/এসইউ/জেআইএম