সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস নির্যাতন শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।
বাধার মুখে সংখ্যালঘু সম্মেলন স্থগিত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আট দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন এবং শারদীয়া দুর্গাপূজার নিরাপত্তার বিষয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের প্রায় ৩৫টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, লুটপাট, হত্যা, নারীর শ্লীলতাহানি, প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির-গির্জায় হামলা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে দেওয়া আট দফা দাবি নিয়েও বর্তমান সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আট দফা বাস্তবায়ন না হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এ দেশে নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারবে না। তাই আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবিগুলো নিয়ে সরকার আলোচনা শুরু না করলে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বিভাগীয় শহরগুলোতে আমরণ গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করা হবে। অনশনের প্রথম দিন সন্ধ্যায় দেশের আট বিভাগে একই সঙ্গে বিগত ৫৪ বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
বর্তমান সরকারের আমলেও সংখ্যালঘুরা বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, বারবার সরকারের পক্ষ থেকে নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবার কথা বলা হলেও বারবারই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমরা সংখ্যালঘু।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত ২২ আগস্ট ফার্মগেটের খামারবাড়িতে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যেখানে বিগত ৫৪ বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের কথা ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওইদিন হঠাৎ করেই একটি ইনডোর প্রোগ্রামকে (ঘরোয়া কর্মসূচি) নিরাপত্তার অজুহাতে প্রশাসন স্থগিত করে দেয়। এভাবে পরপর তিনবার নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংখ্যালঘু সম্মেলনে বাধা দেয়। সর্বশেষ পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুষ্ঠানটি করতে দেওয়া যাবে না বলে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়। এতেই স্পষ্ট, সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বলেন, বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুজন উপদেষ্টা আছেন। কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমস্যা নিয়ে তাদের কখনো কথা বলতে দেখা যায়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিনিধি নেই। আমাদের প্রশ্ন, ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে তাদের বাদ দিয়ে সেখানে কীভাবে ঐক্য হবে?
সংবাদ সম্মেলন থেকে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখপাত্র সুস্মিতা কর বলেন, ভারতে নতুন অভিবাসন আইন করা হয়েছে। এ আইনের পরও সরকারের টনক নড়ছে না। মানুষ নিরাপত্তা চায়। সে যদি নিরাপত্তা না পায়, তাহলে সে দেশত্যাগে বাধ্য হয়। বিগত কোনো সরকারের আমলেই এ দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপদ ছিল না, এখনো নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রীতম পাল, সুব্রত বল্লভ, লিংকন দত্ত, শ্রীনন্দ দাস ও সুমন ত্রিপুরা।