রাজশাহীর মোল্লাপাড়ার মালপাহাড়িয়া মহল্লার পাহাড়িয়া পরিবারগুলো এখনো দিন-রাত উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছে। চোখে-মুখে তাদের ঠিকানা হারানোর ভয়। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এ ভূমিতেই তাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা আর প্রজন্মের পর প্রজন্মের বসতি।
অথচ প্রভাবশালী মহলের দাবিতে সেই স্বপ্নের বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় তারা। এ কঠিন সময়ে ঢাকার কিছু সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী ছুটে আসেন তাদের পাশে দাঁড়াতে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে তারা পাহাড়িয়া পরিবারগুলোকে আশ্বস্ত করে বলেন, আপনারা একা নন, সারা দেশ আপনাদের পাশে আছে। এখানে থাকার অধিকার আপনাদের আছে, কারণ এ ভূমিতেই আপনারা জীবন গড়ে তুলেছেন।
এ সময় তারা সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানান।
মোল্লাপাড়ায় এদিন ছুটে আসেন চর্চা ডটকমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা, ব্লাস্টের প্রধান কার্যালয়ের প্রতিনিধি মিনহাজুল কাদির ও গ্রিন ভয়েসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহসান হাবিব।
তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্লাস্টের রাজশাহী সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সামিনা বেগম, সিসিবিভিওর সমন্বয়কারী আরিফ ইথার, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতা সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তর সম্পাদক পলাশ কুমার মাহাতো। তারা পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের সর্দার বাবুল বিশ্বাসের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শোনেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। যদিও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা হয়নি।
নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের মানুষগুলো এখানেই জন্ম নিয়েছে, এখানেই তাদের পূর্বপুরুষরা চিরনিদ্রায় শায়িত। আইনও বলে, যে পরিবার দীর্ঘদিন ধরে কোনো ভূমিতে বসবাস করে, সেই ভূমির ওপর তাদেরও অধিকার তৈরি হয়। অথচ হঠাৎ করে এক ব্যক্তি এসে দাবি করছেন, জমির মালিকানা! আমরা স্পষ্টভাবে বলছি— এ মানুষগুলো একা নয়, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। সরকারের বহু কমিশনে উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। দ্রুত ভূমি কমিশন না হলে বৈষম্য আরও বাড়বে।’
গত শুক্রবার পাহাড়িয়া পরিবারগুলোর বিদায়ের নামে খাসি কেটে ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আলোচনায় আসে, প্রশাসন তৎপর হয় এবং আয়োজনটি ভেস্তে যায়। এরপর থেকেই রাজশাহীর বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মানবাধিকারকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও পাহাড়িয়াদের পক্ষে রাস্তায় নামেন। মানববন্ধন, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আর প্রতিবাদে মুখর হয় রাজশাহী।