সরকার পতনের পরও থামেনি আমিরুলের মাদক ব্যবসা

3 hours ago 7

সাতক্ষীরার তালা ও পাইকগাছা উপজেলার সীমান্তে কানাইদিয়া এখন মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের অভারণ্যে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে কানাইদিয়া গ্রামের শেখ আলি আহম্মদ (চাঁন মাস্টার) এর ছেলে শেখ আমিরুল।

জানা যায়, তালা-পাইকগাছা সীমান্তে কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী কানাইদিয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে মাদকের আখড়া। সাতক্ষীরার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে উপজেলার পাটকেলঘাটা, মাগুরা হয়ে সরাসরি চলে আসে কানাইদিয়ায়। এ ছাড়াও কক্সবাজার ও টেকনাফে রয়েছে আমিরুলের মাদক সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি।

সেখানে থেকেও নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য আনা হয় এই আখড়ায়। এখান থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেলচালক, নারী ও শিশুদের মাধ্যমে তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর, মাছিয়াড়া, রায়পুর, তালা ব্রিজের মোড়, মোবারাকপুর ও পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি, শ্রীরামপুর, মালতসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে এই মাদক সম্রাট শেখ আমিরুল।

এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন- আমিরুল শেখ ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে কানাইদিয়ার কপোতাক্ষ নদের ধারে বাবলা বাগান ও বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে সংরক্ষণ করে। পরে সুযোগ বুঝে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলচালক, নারীদের মাধ্যমে কপিলমুনি-কানাইদিয়া খেয়া ও কপিলমুনি ব্রিজের মাথার খেয়া দিয়ে পার হয়ে পাইকগাছা ও তালা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যায়। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদক পাচার হয়ে এই দুই খেয়াঘাট দিয়ে।

তারা বলেন, বিগত সরকারের আমলে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় এই মাদক সাম্রাজ্য চালাত আমিরুল। রাজনৈতিক পাট পরিবর্তন হলেও তাদের ব্যবসার কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

তারা আরও বলেন, সন্ধ্যার পর কপিলমুনি খেয়াঘাট থেকে রথখোলা বাজার পর্যন্ত মাদকের গন্ধে রাস্তায় চলাফেরা করা যায় না। কপিলমুনি খেয়াঘাটের পাশে বাবলা বন, বলাইর মোড়সহ রথখোলা বাজারের আশপাশ এলাকায় বসে এই মাদকের আসর। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার যুব সমাজ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। লেখাপড়া খেলাধুলা ছেড়ে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা। সরকার পরিবর্তনের পরে স্থানীয় দুই একজন এলাকা ছাড়লেও আমিরুল শেখ বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে তার ব্যবসা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মোটরসাইকেলচালক বলেন, সারাদিন মোটরসাইকেল ভাড়া চালিয়ে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি আয় করা যায় না। অথচ কিছু কিছু মোটর সাইকেলচালক সারাদিন গাড়ি না চালিয়ে সন্ধ্যায় বড় বড় ভেটকি মাছসহ হাজার হাজার টাকার বাজার করে বাড়ি যায়। এই টাকার উৎস কী আমার জানা নেই। আমরা গরীব মানুষ। সত্য কথা বললে আমাদের গাড়িতে ইয়াবা রেখে ধরিয়ে দিতে পারে, সে ভয়ে কেউ কিছুই বলি না।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, আমিরুল দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। সে বিভিন্ন বাহিনীর হাতে কয়েকবার আটক হয়েছে। জামিন নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আবারও ব্যবসা শুরু করে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীর সহযোগীতা কামনা করছি।

অভিযুক্ত আমিরুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার ব্যবহৃত দুটি নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, আমি থানায় যোগদান করার পরে এ বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। 

পাইকগাছা থানার ওসি সাবজেল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি এমন হয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Read Entire Article