সর্বপ্রথম কে ইসলাম গ্রহণ করেন
মহানবীর (সা.) স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.) ছিলেন মহানবীর (সা.) ওপর ঈমান আনা ও ইসলাম গ্রহণ করা প্রথম মানুষ; নারী-পুরুষ সবার মধ্যে প্রথম। মহানবীর (সা.) ওপর যখন প্রথম ওহি অবতীর্ণ হয়, তিনি ভয় পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন হজরত খাদিজার (রা.) কাছে। তাকে তিনি খুলে বলেছিলেন, সেই আশ্চর্য ঘটনা, নিজের ভয় ও আশংকার কথা। তখন হজরত খাদিজা (রা.) তাকে সান্ত্বনা দেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পর মহানবী (সা.) খাদিজার (রা.) কাছে কম্পিত হৃদয়ে ফিরে এলেন এবং বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। কম্বল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলে তার ভয় কিছুটা কাটলো। তিনি খাদিজার (রা.) কাছে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, আমি আমার জীবন সম্পর্কে শঙ্কাবোধ করছি।
খাদিজা (রা.) তাকে বললেন, কখনো না, আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনই লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন জুড়ে রাখেন, সত্য কথা বলেন, অনাথ অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, মেহমানদারি করেন, বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন। (সহিহ বুখারি)
খাদিজা (রা.) ছিলেন মহানবীর (সা.) প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী। মহানবী (সা.) পঁচিশ বছর বয়সে নিজের চেয়ে কিছুটা বয়োজ্যেষ্ঠ খাদিজাকে (রা.) বিয়ে করেন এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি দ্বিতীয় কাউকে বিয়ে করেননি। ছেলে ইবরাহিম ছাড়া মহানবীর (সা.) সব সন্তানেরই জন্ম হয়েছিলো হজরত খাদিজার (রা.) গর্ভে।
মহানবীর (সা.) জীবনের বড় অংশজুড়ে হজরত খাদিজাই (সা.) ছিলেন তার সঙ্গী ও সব কাজে তার সহযোগী। ইসলামের আবির্ভাবের পর মক্কার কঠিন দিনগুলোতে খাদিজা (রা.) সর্বাত্মকভাবে তাকে সমর্থন করেছেন, সাহস দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন।
পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে ইসলাম গ্রহণ করেন
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন আবু বকর সিদ্দীক (রা.)। নবুয়্যতপ্রাপ্তির আগ থেকেই মহানবীর (সা.) সাথে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ছিল। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুয়ত ও রিসালাত লাভ করার পর দ্রুতই আবু বকরকে (রা.) এ সংবাদ দেন এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। আবু বকর (রা.) কোনো দ্বিধা বা সংশয় ছাড়াই মহানবীর (সা.) কথাকে সত্য মেনে ইসলাম গ্রহণ করেন।
আবু বকর (রা.) যেহেতু মহানবীর (সা.) চরিত্র সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতেন, তাই মহানবীর (সা.) নবুয়্যত লাভের সংবাদ যে সত্য, তিনি যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলতে পারেননা এ ব্যাপারে তার মনে কোনো সন্দেহ ছিল না।
ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি যখনই কাউকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেছি, সে কিছুটা সময় নিয়ে ভেবেছে এবং দ্বিধা প্রকাশ করেছে, শুধু আবু বকর ছাড়া। যখন আমি তাকে ইসলামের দাওয়াত দেই, সে একটুও বিলম্ব বা দ্বিধা করেনি।
আবু বকর (রা.) নিজে মুসলমান হয়েই থেমে থাকেননি, বরং নিজের উদ্যোগে ইসলামের প্রচারও শুরু করেন। আবু বকর (রা.) ছিলেন মক্কার সর্বজনপ্রিয় ও প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি। আভিজাত্য, ভদ্রতা ও সুচরিত্রের জন্য তিনি সুপরিচিত ছিলেন। তার দাওয়াতে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, ওসমান ইবনে আফফান, আবদুর রহমান ইবনে আওফ, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, জুবাইর ইবনে আওয়াম এবং তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
শিশু-কিশোরদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে ইসলাম গ্রহণ করেন
শিশু-কিশোরদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন মহানবীর (রা.) চাচাতো ভাই আলী ইবনে আবি তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.)। তিনি মহানবীর (সা.) কাছে প্রতিপালিত হয়েছিলেন এবং তার সন্তানতুল্য ছিলেন। হজরত খাদিজার (রা.) পর তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
ইসলামের আবির্ভাবের সময় তিনি ৮ থেকে ১১ বছর বয়সী বালক ছিলেন। একদিন তিনি মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরে ঢুকে দেখেন, মহানবী (সা.) ও উম্মুল মুুমিনীন খাদিজা (রা.) নামাজ আদায় করছেন। তিনি খুবই বিস্মিত হন। এ রকম কোনো ইবাদত বা প্রার্থনা তো তিনি আগে কখনও দেখেননি! নামাজ শেষে তিনি মহানবীকে (সা.) জিজ্ঞেস করেন, এটা কী ধরনের ইবাদত? মহানবী (সা.) তাকে ইসলামের বিষয়ে অবহিত করেন এবং বলেন, আমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দ্বীন প্রচারের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই দ্বীন একমাত্র আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং অন্য সব মাবুদকে পরিত্যাগ করতে বলে।
কিশোরবয়সী আলী (রা.) বলেন, তিনি এই নতুন দ্বীনের ব্যাপারে বাবা আবু তালিবকে জানাবেন। কিন্তু মহানবী (সা.) তাকে এ বিষয় গোপন রাখতে বলেন। পরদিন সকালে আলী (রা.) মহানবী (সা.) কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন।
মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে ইসলাম গ্রহণ করেন
মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.)। খাদিজা (রা.) তাকে দাস হিসেবে উপহার দিয়েছিলেন মহানবীকে (সা.)। মহানবী (সা.) নবুয়্যত লাভ করার আগেই তাকে মুক্ত করে দেন এবং নিজের পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। মহানবী (সা.) নবুয়্যত লাভ করার পর মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে জায়েদ (রা.) মহানবীর (সা.) ইসলাম প্রচারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। মহানবী (সা.) যখন ইসলাম প্রচার করতে তায়েফে যান, তখন তার সাথে শুধু জায়েদই (রা.) ছিলেন। মহানবীর (সা.) সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধেরও তিনি অংশগ্রহণ করেন।
ওএফএফ