সাংবাদিককে অফিসে ডেকে শাসালেন ইউএনও

4 hours ago 5

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনের পেছনে মাদকের আখড়া বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে ডেকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ইউএনও মো. আল-আমীনের বিরুদ্ধে।

ফোন করে অফিসে ডেকে দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার জীবননগর প্রতিনিধি মিঠুন মাহমুদের সঙ্গে ইউএনও দুর্ব্যবহার ও রূঢ় ভাষায় কথা বলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার সময়কার কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সেখানে শোনা যায়, গণমাধ্যমকর্মী মিঠুন মাহমুদ সালাম দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কক্ষে প্রবেশ করলেই ইউএনও মো. আল-আমীন বলেন, ‘কী খবর আপনার? আপনার সঙ্গে তো কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করি।’

মিঠুন মাহমুদ উত্তরে কথা বলার চেষ্টা করলে ইউএনও তাকে থামিয়ে বলেন, ‘বাজে কথা বলেন না, আপনি কী মনে করেন? আপনি কী পারেন, আমি জানি না? আর আমি কী করি, আপনি জানেন না?’

এসময় মিঠুন মাহমুদ বলেন, ‘স্যার আমি আপনার খোঁজ রাখতে পারি না।’

ইউএনও বলেন, ‘কীসের সাংবাদিক আপনি, ইউএনও’র খোঁজ রাখেন না? আপনার পত্রিকায় যেদিন বিজ্ঞাপন দিলাম, সেদিনই আপনি নিউজ করালেন। আমার বাংলোর থেকে সেখানে যাওয়ার কোনো পথ আছে? আমার বাংলোর পেছনে, আমবাগান না আম বাজার? জায়গাটার পরিচয় কি ইউএনও বাংলোর পেছনে? এটা পরিচয়?’

ইউএনও বলেন, ‘কে কোথায় নেশা করে, মাদক খাই, কে কোন অপরাধ করে, এর জন্য আমার কী কোনো ইনটেলিজেন্স আছে? যাদের ইনটেলিজেন্স আছে, কোটি কোটি টাকা সোর্স মানি আছে, তাদের নিয়ে না লিখে আমাকে নিয়ে লিখলেন। তাদের নিয়ে লিখলেন না কেন?’

মিঠুন উত্তরে বলতে গেলে তাকে আবারও থামিয়ে দিয়ে ইউএনও বলেন, ‘আপনার যা খুশি আপনি তা লিখতে পারেন না। আপনার লেখার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকলেও। আপনি হলুদ সাংবাদিকতা করেন। যেদিন বিজ্ঞাপনটি দিলাম, একই দিনে নিউজ করে নেমক-হারামি করলেন। এই নিউজতো আপনি করিয়েছেন, আপনার সহকর্মী এটা স্পষ্ট বলে গেছে।’

তখন মিঠুন মাহমুদ ‘আমি বলি’ বলে কথা বলতে গেলেও ইউএনও মো. আল-আমীন তাকে আবারও থামিয়ে দেন। ইউএনও বলেন, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে রুচি হয় না। যারা ২৪ ঘণ্টা বর্ডার থেকে মাদক পাস করছে, মাদকের সঙ্গে ওঠাবসা করছে, তাদের নিয়ে আপনার লেখার সাহস হয় না। আমি কী করেছি? আমাকে নিয়ে লিখলেন।’

ইউএনও বলেন, ‘আপনি মরেন আপনার আচরণের কারণে, আচরণের জন্য, আবারও মরবেন আপনার আচরণের কারণে। আপনি আমার যা খুশি তা করে নিতে পারেন।’

এসময় মিঠুন মাহমুদ বলেন, ‘স্যার আমার তো কিছু করার নেই।’

তখন ইউএনও মো. আল-আমীন আবার বলেন, ‘আপনার সঙ্গে আমার বিরোধ শুরু হয়ে গেছে।’

এসময় ইউএনও চিৎকার করেন এবং মিঠুন মাহমুদকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এরপর সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ ইউএনওর অফিস থেকে বের হয়ে আসেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় দৈনিক সময়ের সমীকরণের জীবননগর অফিসের প্রতিনিধি মিঠুন মাহমুদ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রথম পেজে জীবননগর আম বাজারে মাদক বিক্রি হচ্ছে, এমন একটি বিষয়ে নিউজ হয়েছিল। সেই নিউজকে কেন্দ্র করে ইউএনও সাহেব আমাকে ফোন করে ডাকেন। তিনি ডাকলে আমি তার অফিসে যাই। রুমে গেলেই ইউএনও আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন। তার বাজে ব্যবহার এবং অশালীন আচরণের মাত্রা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তিনি আমাকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।’

মিঠুন মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমি ইউএনওকে বলেছিলাম, এই সংবাদ আমি করিনি। তখন উনি কে বা কার উদাহরণ দিয়ে আমাকেই আবারও দোষারোপ করেন। প্রকৃতপক্ষে সংবাদটির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি সময়ের সমীকরণ পত্রিকার উপজেলার সহকারী ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছি মাত্র।’

মিঠুন মাহমুদ আরও বলেন, এ বিষয়ে ইউএনও আমার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক বা সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। বিষয়টি সমাধান করতেন। তা না করে, উল্টো আমাকে লাঞ্ছিত করলেন।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-আমীনের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ না করে কেটে দেন। পরবর্তীতে তিনি কলও করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি শুনেছি। তবে বিস্তারিত জানি না। রেকর্ডটি শুনবো এবং ইউএনওর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো।’

হুসাইন মালিক/এফএ/এএসএম

Read Entire Article