চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সীমান্ত এলাকার দুটি পয়েন্ট দিয়ে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় গরু। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর এলাকার আমতলী ও বদ্ধ ভবানীর হরিঙ্গা টিলা দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া টপকিয়ে হরহামেশায় ঢুকছে এসব অবৈধ গরু।
সরেজমিনে করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর গ্রামের নলখো এলাকায় গিয়ে পিকআপে গরু ভর্তি করতে দেখা যায়। কিন্তু সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেতেই যে যার মতো গরু নামিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অলিনগরের বড় জাহাঙ্গীর ও ছোট জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ছোট জাহাঙ্গীরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ৫০ লাখ টাকা দিয়ে একতলা বাড়ি করেছেন, অথচ পেশায় তিনি কৃষক। এমনকি ৫ আগস্টের পর এই দুজনের সঙ্গে গ্রামের আরও বেশ কয়েকজন যুক্ত হয়েছেন। এছাড়া বদ্ধ ভবানী দিয়ে ৪-৫ জন গরুর অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অলিনগরের বড় জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র গরু বহন করি। অলিনগর থেকে চিকনছড়া পর্যন্ত পৌঁছে দিলে প্রতি গরুতে ২ হাজার টাকা করে পাই। তার মধ্যে বিজিবি, পুলিশকে দেওয়াসহ গাড়ি ভাড়ার পর হাতে আর কিছু থাকে না। তারমধ্যে এখন বিএনপির নেতাদেরও টাকা দিতে হয়।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা বাজারে রোববার এবং ফটিকছড়ি ইউনিয়নের চিকনছড়া বাজারে মঙ্গলবার গরুর হাট বসে। ওই দুইদিন বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধ গরুর সমাগম ঘটে। হাসিল কেটে অবৈধ এসব গরুকে বৈধতা দেন বাজার ইজারাদার।
এদিকে সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে রাতের আঁধারে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় গরু। এতে করে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মিরসরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ১১০০ গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে পশু রয়েছে ৯৫ হাজার ৯০০টি। খামারিরা দিন দিন খামার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অবাধে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করায় এই দেশের খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।
কয়লা বাজারের ইজারাদার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা জানান, ভারতীয় গরু বাজারে আসে এটা শুনেছি। তবে সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। প্রতি হাটে ৪০০-৫০০ গরু ওঠে। প্রতি গরুর হাসিল ৫০০ টাকা করে কাটা হয়।
অলিনগর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার শওকত হোসেন জানান, ভারতীয় গরু আসছে এরকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে যদি আসে তাহলে আপনারা সহযোগিতা করুন, আমরা প্রতিহত করবো।
ফেনী ব্যাটালিয়নের (৪ বিজিবি) ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খাঁন বলেন, ভারতীয় গরু বাংলাদেশে ঢুকছে, এ রকম সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা অবশ্যই অভিযান চালাবো। তবে অধিকাংশ সময় চোরাকারবারিরা ভুয়া তথ্য দিয়ে আমাদের বিচলিত করে। আমরা সর্বদা সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরীর মতো আছি।
এফএ/এমএস