সেনাপ্রধানের বক্তব্য বিষয়ে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন

3 months ago 33

সেনাপ্রধানের যে বক্তব্য ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েকদিন ধরে তোলপাড় চলছে, সেই বক্তব্য প্রকাশের বিষয়ে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সেনাবাহিনী।

সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত বিষয়গুলোর বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে।

সোমবার (২৬ মে) সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার এই সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার, আরকান আর্মি, রাখাইন করিডোর ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম ছাড়াও সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন।

দুই কর্মকর্তাই বলেন, দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।

আরও পড়ুন

অফিসার্স অ্যাড্রেস অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য নিয়ে এদিন সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।

জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাপ্রধান যেকোনো সময় বা সময়ে সময়ে অফিসার বা সৈনিকদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন, দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এটি তারই একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। এখানে আমরা কোনো সাংবাদিককে ডাকিনি, তিনি জাতির উদ্দেশে কোনো ভাষণ দেননি, আইএসপিআর সরকারিভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি।

এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, যেটা (সেনাপ্রধানের বক্তব্য) গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখছেন, এটার সঠিকতা বা বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল বলেন, এটার সঠিকতা নিয়ে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান। আমরা যদি কোনো কিছু জানাতেই চাইতাম, তাহলে আপনাদের ডাকতাম, গণমাধ্যম থাকতো, আইএসপিআর বিবৃতি দিতো। এসবের কিছুই করিনি।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে (অফিসার্স অ্যাড্রেসে) অনেক কথা হয়েছে, এ বিষয়ে আমরা কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। তবে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। আমাদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা বা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এ সেনা কর্মকর্তা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্যের যে গুঞ্জন, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, এরকম আসলে কিছু হয়নি। বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাবাহিনী ওতপ্রোতভাবে কাজ করছে। একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে। একটি পরিবারের মতো।

করিডোর, পাহাড় ও মিয়ানমার প্রসঙ্গ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য বাংলাদেশ সীমান্তে ‘মানবিক করিডোর’ করার যে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

কর্নেল শফিকুল জবাবে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।

পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড়ে একটি আত্মস্বীকৃত টেরোরিস্ট দল রয়েছে, যারা সংঘাতপূর্ণ কাজ করে থাকে। তাদের নির্বাচনে যুক্ত করা সমীচীন নয় বলে মনে হয়।

আরও পড়ুন

চট্টগ্রামে কুকি-চিনের পোশাক তৈরি হচ্ছে, পুলিশ ৩০ হাজার পোশাক উদ্ধার করেছে, এসব বিষয়েও প্রশ্ন আসেও সংবাদ সম্মেলনে।

কর্নেল শফিকুল বলেন, কুকি-চিন বম সম্প্রদায়ের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের টোটাল সংখ্যা হচ্ছে ১২ হাজার জন। এই ১২ হাজার জন কীভাবে ৩০ হাজার ইউনিফর্মের জন্য…।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, এই সংবাদটি বস্তুনিষ্ঠ। কেএনএফের অস্ত্রের ব্যবহার দেখেছি আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে। আমাদের সেনাসদস্য আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে তাদের দ্বারা। সেই প্রেক্ষাপটে এটা ভালো খবর নয়। এটা নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় আমলে নেওয়া হয়েছে, কাদের জন্য এটা তৈরি হচ্ছিল এবং এই ৩০ হাজার পোশাক তাদেরই কি না, সেটা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তপথে অস্ত্র আনা-নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার একটি জটিল পরিস্থিতির মুখে আছে এখন। ওই জায়গায় মিয়ানমার সরকারের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। রাখাইন অলমোস্ট দখল হয়ে গেছে।

টিটি/এমকেআর/এএসএম

Read Entire Article