প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ছয় বছর। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর থেকে চামড়াবন্দর পর্যন্ত সড়কের জমি অধিগ্রহণের কাজ। ফলে এই সড়ক নির্মাণ তো দূরের কথা, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে।
করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর থেকে চামড়াবন্দর পর্যন্ত সড়কটি এখন যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকার চিত্র। খানাখন্দ আর ধুলা–কাদায় ভরা এই সড়কে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষায় হাঁটা কষ্টকর, শুকনা মৌসুমে ধুলায় শ্বাস নেওয়া দায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে এই সড়কে কেবল মাটি ফেলা আর কিছু জায়গায় আংশিক পাকা করার কাজ চলছে। পুরোপুরি সংস্কার বা নতুন সড়ক নির্মাণের কাজ এখনো শুরুই হয়নি চামড়াবন্দর পর্যন্ত অংশে।
পেশায় একজন সিএনজিচালক আবদুল গফুর মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাস্তা ভাঙাচোরা এত বেশি যে, অনেক সময় অটোরিকশা উল্টে যায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তায় আমাদের চলতে হয়। যাত্রীদেরও ভয় থাকে সবসময়।’
নিয়ামতপুর এলাকার গৃহিণী অনিমা রানি বলেন, ‘বর্ষায় কাদা, অন্য সময় ধুলাবালি—দুই সময়েই ভোগান্তি। বাচ্চা নিয়ে বের হওয়া মানে একরকম যুদ্ধ। সরকারের লোকজন শুধু কথা বলে, কাজ হয় না।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক মেম্বার রেনু মিয়া বলেন, ‘ছয় বছর ধরে রাস্তা নিয়ে কথা শুনছি। কাজ হচ্ছে না, বরং রাস্তাটা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পানি জমে, শুকালে ধুলায় কিছু দেখা যায় না। দ্রুত কাজ শেষের জন্য ওপর মহলের দৃষ্টি কামনা করছি।’
অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পে স্থবিরতা
২০১৯ সালে ৭৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে আট কিলোমিটার বাইপাস সড়কসহ কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াবন্দর আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে সড়কটি ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে নিয়ামতপুর পর্যন্ত অংশে কিছু কাজ এগোলেও নিয়ামতপুর থেকে চামড়াবন্দর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশে কাজ শুরুই হয়নি।
প্রকল্পের মধ্যে সড়ক প্রশস্তকরণ, সেতু-কালভার্ট নির্মাণ এবং নতুন বাইপাস সড়ক নির্মাণের কথা রয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের জুনে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণের জন্য পাঁচটি এলএ কেসের মধ্যে চারটি সম্পন্ন হয়েছে। একটি কেস সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। ফলে থমকে আছে প্রকল্পের কাজ।
সওজ কিশোরগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘নিয়ামতপুর থেকে চামড়াবন্দর অংশে এখনো জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। আমরা মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত প্রস্তাব পাঠিয়েছি। জমি পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু করা হবে। তবে বর্ধিত সময়ের মধ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে নিয়ামতপুর পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ করার আশা করছি।’
চামড়াবন্দরগামী যাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রতিদিন এই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করি। কয়েক মাস পর পর শুনি, কাজ শুরু হবে—কিন্তু কিছুই হয় না। মনে হয় সরকারও এই সড়কের কথা ভুলে গেছে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে কৃষিপণ্য, মাছসহ নানা মালামাল আনা-নেওয়া করা্ হয়। রাস্তা খারাপ থাকায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।’
চামড়াবন্দর এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন আলম বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের যোগাযোগ হয়। আগে এই পথে পর্যটকরা যেতেন। এখন সড়কের যে অবস্থা, কেউ আর আসতে চায় না।’
এসআর/এমএস