টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কৃষক মুক্তেল হোসেনের ছেলে মিলন। স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। এরই মধ্যে চাকরি হওয়ায় তিনি বেশ খুশি। অনুভূতি প্রকাশে মিলন জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবা কৃষি কাজ করে। পুলিশের চাকরির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে ১২০ টাকা লেগেছে। সেই ১২০ টাকার বিনিময়ই চাকরি পেয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ হলো।
‘বিষয়টি শুনে আমার মা-বাবাও অনেক খুশি। আমিও অনেক আনন্দিত। যা ভাষাই প্রকাশ করার মতো নয়। আমার বাবা অনেক কষ্ট করে কৃষি কাজ করে আমার পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে। এতে বাবার মুখে হাসি ফুটাতে পেরে আমি গর্বিত।’
শুধু মিলন নয় তার মতো আরও ৫০ জন টাঙ্গাইল জেলায় ১২০ টাকায় আবেদন করে প্রাথমিকভাবে পুলিশে চাকরি নিশ্চিত হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই কৃষক, দিনমজুরসহ হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান।
‘লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে আর মামা-খালুর জোর না থাকলে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায় না! এমন কথা লোকমুখেই ছিল বেশ প্রচলিত।’ তবে এবারে তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে টাঙ্গাইলে পুলিশ কনস্টেবল পদে ৫০ জনের চাকরি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
রোববার রাতে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস গ্রিলশেডে ফলাফল প্রকাশ করেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। এ সময় ৫০ জনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আর এর মধ্যে দিয়ে টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার মাত্র ১২০ টাকায় ৫০ জনকে পুলিশে চাকরি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
চাকরি পাওয়া হাসিবুল হাসান সৌরভ জাগো নিউজকে বলেন, পরীক্ষার পরে আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি জন্মের পরেই শুনে এসেছি পুলিশের চাকরি পেতে ‘ঘুষ কিংবা মামা ও খালার জোর ছাড়া হয় না’। এই প্রথম আমরা দেখতে পারলাম নিজের যোগ্যতায় কোনো টাকা ছাড়াই শুধু ১২০ টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। পুলিশের চাকরি করে দেশের সেবা করতে চাই।
মিলি জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবা কৃষি কাজ করতো। বাবার পাশাপাশি নিজেও প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাইতাম। মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগছে।
রোকসানা জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবা ওয়ালের মিস্ত্রি শ্রমিকের কাজ করতো। বাবা কষ্ট করে আমার লেখাপড়ার খরচ চালাতো। আমি পুলিশের চাকরি করে দেশ ও মানুষের সেবা করতে চাই। মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়াতে চাই।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জাগো নিউজে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের পর একদম স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। লিখিত ও ভাইভা শেষে ৫০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি মেধা অনুযায়ী অপেক্ষমাণ ১০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের চাকরি হয়েছে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে মেডিকেল পরীক্ষার পর তাদের ট্রেনিং করার জন্য নির্ধারিত পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো হবে। আশা করি নতুন সদস্যরা পেশাদারত্বের সাথে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবেন।
আব্দুল্লাহ আল নোমান/এমআরএম