এক চেকপোস্টে বদলে গেল সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে হবিগঞ্জ অংশে চুরি ছিনতাই ও যানজট নিরসনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট হাইওয়ে পুলিশ। মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে ধরা হচ্ছে মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালান। ফিটনেসবিহীন যানবাহনও প্রসিকিউশন হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ তৎপরতায়।
হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিমের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জ অংশে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কাটিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে অলিপুরের মানুষ। হাইওয়ে পুলিশ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের উপস্থিতিতে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে।
জানা গেছে, হবিগঞ্জের মাধুবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা জুড়ে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে বিশাল শিল্পাঞ্চল, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এখানকার প্রাণ-আরএফএল, স্কয়ার ডেনিম, বাদশা গ্রুপ, স্টার সিরামিকস, নেরোলাক পেইন্ট, আকিজ, যমুনা গ্রুপ, বিএইচএল, ম্যাটাডোর ও সায়হাম টেক্সটাইলের মতো শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এসব শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা প্রতিদিন আসা যাওয়া করায় তীব্র যানজট লেগেই থাকত। দুর্ঘটনা-চুরি-ছিনতাইয়ের মতো একাধিক ঘটনা ঘটত প্রতিদিন। হাইওয়ে পুলিশ বক্স এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বক্স স্থাপিত হওয়ায় অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক ও পথচারীদের মধ্যে ফিরে এসেছে স্বস্তি।
গত ২৪ আগস্ট অলিপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয়। এই ক্যাম্প উদ্বোধনের পরদিন থেকেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক হাইওয়ে পুলিশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার পর থেকে অলিপুরের যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের এখন আর অলিপুরে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হতে হয় না।
হাইওয়ে পুলিশ অলিপুর ক্যাম্পের সামনে একজন পুলিশ পরিদর্শক ও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিরতি ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে যেমন সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বর্ডার থেকে ভারতীয় মাদক বা চোরাচালান পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে তেমনি ফিটনেস ও কাগজপত্রবিহীন গাড়ির প্রসিকিউশনের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ক্যাম্প উদ্বোধনের পর থেকে স্থানীয় শিল্প মালিক এবং কর্মীরা নিজেদেরকে অনেক নিরাপদ অনুভব করছেন।
প্রাণ আর এফএল গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শেখ জালাল কালবেলাকে বলেন, ক্যাম্প উদ্বোধনের আগে মাস শেষে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মীরা সন্ধ্যার পর বেতন নিয়ে যখন বাসায় ফিরত তখন প্রায়ই তারা ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ত, যা এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। অলিপুরের যানজটে মানুষ আতঙ্কে থাকত। এখন সেই ভয়াবহ যানজট নেই বললেই চলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরএফএলে কর্মরত এক নারী কালবেলাকে বলেন, হাইওয়ের পুলিশ ক্যাম্প হওয়ায় এখন নিজেদের নিরাপদ মনে হয়। আগে যেখানে বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত আতঙ্কে থাকতাম এখন আর সেই আতঙ্ক নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের এই ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা এবং ক্যাম্প কেন্দ্রিক কর্মতৎপরতায় বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ইমাদ আলী নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কালবেলাকে জানান, এই অলিপুরে প্রতিদিনই চুরি ছিনতাই হতো। দীর্ঘ যানজটের সময় খারাপ মানুষগুলো এখানে চুরি ছিনতাই করত। পুলিশের তৎপরতা না থাকায় চোররা নির্বিঘ্নে তাদের অপরাধ চালালেও কেউ কিছু বলত না। চলাচলে সবাই এখন নিরাপদ বোধ করছে, চুরি ছিনতাই এখন নাই বললেই চলে।
হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, অলিপুর সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ও শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ এই মহাসড়ক ব্যবহার করে। মহাসড়ক ও শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ক্যাম্প ছিল সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে ইতিবাচক ফল পাচ্ছি। অলিপুরে এখন আর আগের মতো যানজট নেই, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে চোরাচালান, বেড়েছে প্রসিকিউশন, শিল্প মালিক-শ্রমিকরাও এখন নিরাপদ বোধ করছেন। স্থানীয় জনগণ এবং শিল্প মালিকদের সাধ্যমতো আমাদের সহযোগিতা করছেন যা পজিটিভ পুলিশিং ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য ইতিবাচক বলে আমি মনে করি।