সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে দেশে প্রথম আন্দোলন গড়ে ওঠে ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৮ সালেও আন্দোলন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাগ করে পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করে দেন।
কিন্তু এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন সেই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের সেই রায়ের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন তারা। একপর্যায়ে কারফিউয়ের মধ্যেই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটা ব্যবস্থার নতুন বিন্যাস ঠিক করে দেন।
এরপর সরকার গেজেটও জারি করে। কিন্তু ততদিনে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রূপ নেয় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ভেঙে দেওয়া হয় সংসদ। আর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত নিয়ে অন্তর্বতী সরকারকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি।
কোটা বাতিলে ২০১৩ সালে আন্দোলন
বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলাগুলোর জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশসহ মোট ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিলো। এতে মাত্র ৪৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেতেন। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। যেকোনো পরীক্ষায় কোটার অধীনে থাকা প্রার্থীদের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েও বঞ্চিত হতেন তারা।
২০১৩ সালে ‘মেধা মূল্যায়ন মঞ্চ’ নামে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম এই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়ে আন্দোলনকারীরা ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল পুনঃমূল্যায়ন এবং সব পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানায়।
ওই বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রথমে শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ করেন। কিন্তু পুলিশের দমন-পীড়ন ও ছাত্রলীগের হামলার মুখে সফলতার মুখ দেখেনি সেই আন্দোলন।
২০১৮ সালে প্রথম বড় আন্দোলন
কোটা বাতিলের দাবিতে ২০১৩ সালের আন্দোলনের পরও বেশ কয়েকবারই মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। তবে তা ছিল খুবই সীমিত আকারে। কোটা নিয়ে আন্দোলন প্রথমবারের মতো বড় আকারে রূপ নেয় ২০১৮ সালে। ওই বছরের ৩১ জানুয়ারি সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল এবং এর পুর্নমূল্যায়ন চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও দুই সাংবাদিক। এতে কোটা পদ্ধতিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মার্চ মাসে এসে ওই রিটটি খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
রিট খারিজ করার পরপরই ফেব্রুয়ারি মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘কোটা সংস্কার চাই’ নামে একটি পেজ খোলা হয় এবং শাহবাগকে কেন্দ্র করে পেজটি থেকে মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া শুরু হয়। এর মাধ্যমেই মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।
এসময় কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মও গঠন করা হয়। রিট খারিজ হওয়ার পর কোটা পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন করা হবে না মর্মে আদেশ জারি করা হয়। তবে কোটা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা আনে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ওই আদেশে বলা হয়, ‘সব ধরনের সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে সেসব পদ পূরণ করা হবে।’
অর্থাৎ আগের একটি আদেশের মাধ্যমে যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ না হলে কোটা খালি রাখার কথা বলা হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার এবং মেধা তালিকা থেকে নিয়োগের কথা জানায়। তবে দাবি আদায়ে অনড় থাকে শিক্ষার্থীরা।
এসময় আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলি চালানোসহ কয়েকজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই বছরের এপ্রিলে আন্দোলন সর্বব্যাপী রূপ লাভ করে। শাহবাগ থেকে ডাকা আন্দোলনে অংশ নিয়ে সারা দেশেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
টানা আন্দোলন কর্মসূচির মুখে ওই বছরের ১১ এপ্রিল সংসদে দাঁড়িয়ে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় আরও পরে, অক্টোবর মাসে।
এ সময় নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
১৪তম থেকে ২০তম অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা থেকেই নিয়োগের কথাও জানানো হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণার পর থেকে পরিপত্র জারি করা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ওপর হামলা ও গ্রেফতারের বেশ কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে আসে।
কোটা বহাল করেন হাইকোর্ট
কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তিন বছর পর ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে পরিপত্রের পাশাপাশি এর আগে দেওয়া হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের আদেশ প্রতিপালন না করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য অধিকারের প্রতি অবজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেন। রিটকারীদের পক্ষে রায় আসে, অর্থাৎ আগের মতো কোটা বহাল হবে বলে জানান আদালত।
গড়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
হাইকোর্টের রায়ের পর জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার চেয়ে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মতো সাধারণ কর্মসূচি থাকলেও পরে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও পরে তাদের দাবি এক দফায় এসে ঠেকে।
তাদের দাবিতে বলা হয়, সব গ্রেডে সব ধরনের ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতি সংশোধন করতে হবে।
প্রথম দিকে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন না করলেও আন্দোলনের মাত্রা বাড়ার পর আবেদন করেন। সেই আবেদন ২০২৪ সালের ৪ জুলাই শুনানির জন্য এলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাতে (আপিল আবেদনে) ওইভাবে গুরুত্বসহকারে কোনো সাড়া দেননি। ফলে, আন্দোলন আরও বাড়ে। ৯ জুলাই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন ঢাবির দুই শিক্ষার্থী আল সাদী ভূঁইয়া ও আহনাফ সাঈদ খান। ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন আপিল বিভাগ। পরদিন হাইকোর্টের রায়ের আংশিক আদেশ প্রকাশিত হয়। তিন দিন পর ১৪ জুলাই প্রকাশিত হয় পূর্ণাঙ্গ রায়।
‘মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা পাবে না তো রাজাকারের নাতিরা পাবে?’
১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এতো ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।
কোটা নিয়ে আদালতের রায় প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আদালতে যাক, বলুক। তা না, তারা রাজপথে সমাধান করবে। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমার তো দাঁড়ানোর অধিকার নেই, সংবিধানও বলে না। সংসদও বলে না, কার্যপ্রণালিবিধিও বলে না।’
‘যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে, ততক্ষণ আমাদের কিছু করার থাকে না। এ বাস্তবতা তাদের মানতে হবে। না মানলে কিছুই করার নেই।’
তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলে সেখানে সরকার বাধা দেবে না বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণ করে যাচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না।
ছাত্রলীগের হামলা
শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ বক্তব্যের পর সেদিন রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা স্লোগান দেন, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’
পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয় সারা বাংলার ছাত্রসমাজ। ১৬ জুলাই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের মধ্যে পুলিশ গুলি চালায় এবং ছাত্রলীগ হামলা করে। তাতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিমসহ ছয়জন শহীদ হয়। পরদিনও বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বাধে। সরকার সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়।
১৭ জুলাই সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সাথে সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।’
তিনি দেশজুড়ে সংঘাতের বিচারবিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দেন এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে আন্দোলনকারীদের বলেন, সেখানে ছাত্রসমাজ ন্যায়বিচার পাবে বলেই তার বিশ্বাস।
কিন্তু শেখ হাসিনার এ আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘শাটডাউনের’ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। তাদের এ কর্মসূচিতে প্রায় অচল হয়ে পড়ে সারা দেশ। বিভিন্ন স্থানে নিহত হন ৪১ জন।
সেদিন দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে এসে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আন্দোলনকারীরা যখন চাইবে, তখনই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকার প্রস্তুত। কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে একমত। কোটা নিয়ে পরিপত্র বাতিলের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার যে আপিল করেছে, তার শুনানি এগিয়ে আনা হয়েছে ২১ জুলাই।
পাশাপাশি, শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, গত কয়েক দিনের সংঘাত ও প্রাণহানির সার্বিক ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করতেও প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করা হবে বলে জানান আনিসুল হক। আইনমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের পরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন।
একপর্যায়ে সরকার মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেয়। ফলে ইন্টারনেট দুনিয়া থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাংলাদেশ।
১৮ জুলাইও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। এমন প্রেক্ষিতে সেদিন রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী নামানো হয়। এই কারফিউয়ের মধ্যেই ২১ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটা ব্যবস্থার নতুন বিন্যাস ঠিক করে দেন। আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনার সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ৯৩ শতাংশ পদে নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। সরকার অবিলম্বে গেজেট জারি করে এই নির্দেশনা কার্যকর করবে।
এরপর সরকার গেজেটও জারি করে। কিন্তু ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রূপ নেয় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ভেঙে দেওয়া হয় সংসদ। আর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত নিয়ে অন্তর্বতী সরকারকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি।
এফএইচ/এমএমএআর/এমএস