বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও দুশ্চিন্তায় অলি

4 hours ago 4

‘ঠিকভাবে তিনবেলা খেতে পারিনি। পড়ালেখার খরচ ছিল না। স্যাররা ফ্রি পড়াইছেন। এরপর উপবৃত্তি পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করি। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ হয়েছে। এবার টাকা আরও লাগবে।’

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বি-ইউনিটে (কলা,আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান) ভর্তির সুযোগ পাওয়া আল আমিন অলি হোসেন। তিনি এখন তার ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

আল আমিনের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার হায়াতখান এলাকায়। জহুরুল হক-কল্পনা দম্পতির ছেলে। বাবা জহুরুল হক একজন রিকশাচালক, মা কল্পনা বেগম স্থানীয় একটি কারুপণ্য কারখানার শ্রমিক।

আল আমিন ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উলিপুর সরকারি কলেজ থেকে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ পান। এর আগে ২০২২ সালে উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান। পরে তাকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার জন্য শিক্ষাবৃত্তি দেয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

আল আমিনের বাবা জহুরুল হক বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ছাওয়াটাকে পড়াইছি। এরমধ্যে বিভিন্ন সহযোগিতাও পেয়েছি। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইছে সে। খুবই খুশি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। জমিজমা বলতে দুই শতক বসতবাড়ি। ১৫ বছর বাদাম বিক্রি করেছি। গ্রামে ফেরি করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রিকশা চালাই। এখন বয়স হয়েছে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারি না। ঋণ করে ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা বানিয়েছি। সেটিও পুরাতন হয়েছে। ওটা দিয়েই কোনোরকম আয় রোজগার করি। তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলে।’

আল আমিনের মা কল্পনা বেগম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে ছেলে। ভর্তি হতে না কি অনেক টাকা লাগবে। ঢাকায় পড়তে অনেক খরচ। কীভাবে কি হবে কিছুই বুঝতেছি না।’

আল আমিন বলেন, এইচএসসি পাস করার পর শিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হয়ে গেলে হতাশায় পড়ে যাই। মনে হয়েছিল আর পড়াশোনা করতে পারবো না। পরে কলেজের খায়রুল ইসলাম স্যারের সহযোগিতায় বিনামূল্যে কোচিং করলেও ঢাকায় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার টাকাও ছিল না। আল্লাহর রহমতে বি-ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি, এখনতো আরও অনেক টাকা লাগবে।

উলিপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক খায়রুল ইসলাম বলেন, আল আমিন অত্যন্ত মেধাবি ও বিনয়ী। বাবা-মা দরিদ্র হওয়ায় তার পক্ষে শিক্ষার ব্যয় বহন করা খুবই কষ্টকর। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করেছি। আল আমিন দেখিয়ে দিয়েছে ঠিক দিকনির্দেশনা পেলে গ্রাম থেকেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে চান্স পাওয়া যায়।

জেডএইচ/এএসএম

Read Entire Article