ইসলাম একটি সর্বকালীন পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন, অর্থব্যবস্থা, সমরব্যবস্থা, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা নীতি, আইনকানুনের যাবতীয় শাখা-প্রশাখাসহ মানবজীবনের যাবতীয় সমস্যার বিস্তারিত দিকনির্দেশনা রয়েছে ইসলামে।
ইসলাম মানুষকে যেমনিভাবে আখিরাতের সব বিষয়ের দিকনির্দেশনা দিয়েছে, তেমনিভাবে দুনিয়ার সব বিষয়েও দিয়েছে ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম।
দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাস, ঘুষখোর, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারী, মিথ্যাবাদী, ধর্মের প্রতি উদাসীন, খোদাদ্রোহী ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়া বা ক্ষমতায় বসার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ইসলাম সর্বদা ব্যক্তির সততা, যোগ্যতা, খোদাভীতি, ইমান-আমল, জ্ঞান ও চারিত্রিক গুণাবলিকে প্রাধান্য দিয়েছে।
তাই ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া যেমন জরুরি, প্রার্থী বা নির্বাচিত ব্যক্তিও তেমন সৎ-যোগ্য, জ্ঞানী-গুণী, চরিত্রবান, খোদাভীরু, আমানতদার, ন্যায়পরায়ণ, দেশপ্রেমিক, মানবদরদি ও দায়িত্বানুভূতিসম্পন্ন হওয়া তারচেয়েও বেশি প্রয়োজন।
কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের আশপাশের অনেকেই ভোট দিতে যান না। তাই কেউ কেউ প্রশ্ন করেন যে, ‘ভোট না দিলে গোনাহ হবে কি না?’
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, যদি আপনার কাছে কাউকে উপযুক্ত মনে না হয়, নিরাপদ পরিবেশ আছে বলে মনে না হয়, তাহলে ভোট না দিলে গোনাহ হবে না।
তিনি বলেন, ভোট দেওয়া ফরজ-কিংবা ওয়াজিব না। তবে দিলে অবশ্যই আপনাকে দায়িত্বশীলতা, আমানতদারিতার সঙ্গে দ্বীন, ইসলাম রাষ্ট্র ও মানুষের সামগ্রিক স্বার্থ বিবেচনা করে দিতে হবে। তবে আপনি ভোট না দিলে কেউ যদি কোনো সুবিধা পায়, তবে সেটাও করা উচিত না। এখানে আপনার অ্যাক্টিভিটিসির ফলাফল কী হতে পারে, এটার ওপর অনেককিছু নির্ভর করে।
যোগ্য নেতা নির্বাচন না করলে আল্লাহর কাছে যে জবাব দিতে হবে
ভোটের মধ্যে যে তিনটি (সাক্ষ্য প্রদান, সুপারিশ, প্রতিনিধিত্বের সনদপ্রদান) বিষয় রয়েছে এর মধ্যে ‘শাহাদত’ বা সাক্ষ্যের বিষয়টি মৌলিক। অর্থাৎ কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো, তার ব্যাপারে এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, লোকটি ভালো এবং যোগ্য। এখন যদি যথাযথ জায়গায় সীল দিয়ে এ সাক্ষ্য প্রদান করা হয়, তবে তা হবে সত্য সাক্ষী। অন্যথায় মিথ্যা সাক্ষী হবে। আর মিথ্যা সাক্ষ্য যে কত বড় কবিরা গোনাহ ও হারাম কাজ, তা কারোরই অজানা নয়। (মাসিক আল কাউসার)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যে লোক সৎকাজের জন্য কোনো সাক্ষ্য দেবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, সে তার পাপের একটি অংশ পাবে।’ (সূরা নিসা : ৮৫)।
এই আয়াতে সুপারিশকে ভালো ও মন্দ দু’ভাগে বিভক্ত করে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সুপারিশ যেমন মন্দ নয়, তেমনি প্রত্যেক সুপারিশ ভালোও নয়। আরও বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ভালো সুপারিশ (নির্বাচন) করবে, সে সওয়াবের অংশ পাবে এবং যে ব্যক্তি মন্দ সুপারিশ করবে, সে আজাবের অংশ পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি কারো বৈধ অধিকার ও বৈধ কাজের জন্য বৈধ পন্থায় সুপারিশ করবে, সেও সওয়াবের অংশ পাবে।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছ, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান করো, তাতে তোমাদের নিজের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তদাপিও।’(সুরা নিসা : ১৩৫)।
সহিহ বোখারির একটি বর্ণনায় হজরত আবু বকর (রা.) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদা এক জায়গায় হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তিন তিনবার সাহাবিদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে কবিরা গোনাহগুলোর মধ্যে বড় কবিরা গোনাহের কথা বলব?’ সাহাবিগণ হ্যাঁ সূচক উত্তর দেওয়ার পর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা (এ দুটি কথা বলার পর তিনি সোজা হয়ে বসলেন) এবং বললেন, শুনে নাও! মিথ্যা সাক্ষ্য অনেক বড় কবিরা গোনাহ।’ (মাসিক আল কাউসার)